আমার আশপাশের মানুষ প্রায়ই বলে, ‘তুমি কোনো কিছু ইতিবাচকভাবে নিতে পারো না।’ ইনফ্লুয়েন্সার অরি চৌধুরীর ভাষায় বলতে হয়, ‘শালার সব সময় নেগেটিভ। সব সময় নেগেটিভ।’ তাই ভাবছি, মোটিভেশনাল চেতনায় এখন থেকে সবকিছু ইতিবাচকভাবে দেখব। খালি প্রশংসা করব। এত প্রশংসা করব যে মানুষ নিজেই অবাক হয়ে ভাববে, আসলেই কি আমি এত ভালো?

এই যেমন আজকে রিলিজ পেল রায়হান রাফীর তুফান মুভির ‘টিজ’। এতদিন টিজার শুনসি। এখন নতুন দেখলাম টিজ। কী চমৎকারভাবে টিজারকে শর্ট করে ‘টিজ’ করেছেন পরিচালক (কদিন পর আরও শর্ট হয়ে এটা হয়ে যাবে টি)। খুব ভালো আইডিয়া। টিজারকে যে টিজ বলা যায়, এটা তো আমার মাথায়ই আসে নাই।

পুরা টিজটা দেখলাম। সেই! অসাধারণ। ফাটাফাটি! আমি জীবনে যে কয়টা হিন্দি অ্যাকশন মুভি দেখসি, সবগুলা যেন একদম সিন বাই সিন আবার দেখলাম এই টিজে। মারাত্মক ব্যাপার। লুক, কালার গাড়ি, বাড়ি, একদম অ্যাকুরেটভাবে দেখিয়েছেন রায়হান রাফী। হিন্দি মুভিতে গাড়িটা যেভাবে ব্রেক করে, গাড়ি থেকে যেভাবে নায়ক নামে, যেভাবে বিড়ি টানে সবই আছে এখানে। দেখে আপনি টাস্কি খেতে বাধ্য। মনে হবে, আগে কোথায় যেন দেখেছেন দৃশ্যগুলো, কিন্তু ধরতে পারবেন না। এটাই পরিচালকের মুন্সিয়ানা। কতটা পরিশ্রম করলে একসঙ্গে এতগুলা মুভির দৃশ্য একটা টিজে দেখানো যায়? কত শত মুভি দেখতে হয়েছে পরিচালকের এডিদের! নোট নিতে হয়েছে–হ্যাঁ, এই যে, এই মুভির বন্দুকটা নাও। গুড। আর ওই মুভিতে যেভাবে গাড়িটা পুড়ে যায়, ওটা রাখো।’ অসম্ভব লেভেলের ডেডিকেশন! অন্য অ্যাকশন মুভিগুলোতে নায়ক যেভাবে হাঁটে, যেভাবে গাড়ি থেকে পা ফেলে, এখানেও নায়ক একইভাবে হাঁটে–বাংলা মুভিতে এরকম নিখুঁত দৃশ্যায়ণ আগে কখনো দেখা যায় নাই।

আর ডায়লগের কথা কী বলব! নায়ক এখানে সাধু ভাষায় একটা বয়ান দেয়। কিন্তু সংলাপ লেখক ছোট পরিসরেও দারুণ ক্রিয়েটিভিটির পরিচয় দিয়েছেন। চাইলেই উনি পুরা ডায়লগটা সাধু ভাষায় রাখিতে পারিতেন। কিন্তু সাধু আর চলিতের এক অপূর্ব মেলবন্ধন তিনি ঘটাইয়াছেন উক্ত ডায়লগে। যাকে বলে ফিউশন।

সবশেষে একটা ঐতিহাসিক ডায়লগ চমৎকারভাবে বসিয়ে দিয়েছেন চঞ্চলের মুখে। ভিলেনের মুখে আবহমান কাল ধরে আমরা যেমন ডায়লগ দেখি, তেমনি একটা ডায়লগ দিয়ে পরিচালক বুঝিয়ে দিয়েছেন, দেশি আর বিদেশীকে এক সুঁতোয় গাঁথতে জানেন তিনি।

সবমিলিয়ে বলতে হয়, প্রতি বছরের মতো এবারও বাংলা সিনেমার সুদিন আসতে চলেছে। মানুষের এই উত্তেজনা দেখতেও ভালো লাগছে। বাংলা সিনেমার জয় হোক।

Categories: রম্য

Adnan Mukit

আদনান মুকিত। ছোটবেলা থেকেই লিখছেন। ‘আমাদের দেশ বাংলাদেশ’ টাইপ হাতের লেখা লিখতে লিখতেই তার লেখালিখি শুরু। তখন এক হাতেই লিখতেন, প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় এখন দুই হাতেই লিখছেন বিভিন্ন পত্রিকায়। রস+আলো, কিশোর আলোর পাতায় মাঝে মাঝেই শোভা পায় তার লেখা গল্প, ফিচার কিংবা কমিকস। লিখছেন পরীক্ষার খাতায়ও। পত্রিকায় লিখে বিল আর পরীক্ষার খাতায় লিখে শূণ্য পান আদনান মুকিত। লিখেছেন দুটো বই--'ডিগবাজি' আর 'কী একটা অবস্থা'। এত লিখেও সন্তুষ্ট নন তিনি, তাই এই ওয়েবসাইট। আদনান মুকিতের এই ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগত।

0 Comments

Leave a Reply

Avatar placeholder

Your email address will not be published. Required fields are marked *